রিকেটস রোগ কী শুধু ভিটামিন-ডি এর অভাবেই হয়?

রিকেটস রোগ কী শুধু ভিটামিন-ডি এর অভাবেই হয়?

রিকেটস রোগে শিশুদের হাড়ের গঠন দুর্বল হয়, হাড় বাঁকা হয়ে যায়। এছাড়াও শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়।

রিকেটস এর লক্ষণ

  • শিশুর পা বাঁকা হওয়া
  • হাতের কবজি এবং পায়ের গোড়ালি মোটা হয়ে যাওয়া
  • শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হওয়া
  • হাড়ে ব্যথা
  • মাংসপেশীর দুর্বলতা 

রিকেটস এর কারণসমূহ
প্রধাণত ভিটামিনডি এর অভাবে হয়। ছাড়াও ক্যালসিয়াম এর অভাব এবং জিনগত কারনেও রিকেটস হতে পারে।

রিকেটস হয়েছে বোঝা যাবে কিভাবে?
শিশুর শারিরীক পরীক্ষা, ল্যাব ইনভেস্টিগেশন, এক্সরে ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
মূলত ভিটামিনডি, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত রোদের আলোয় রাখা রিকেটস চিকিৎসার মূল ভিত্তি। ছাড়াও প্রয়োজনে অন্যান্য ঔষধ, ক্ষেত্রবিশেষে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

রিকেটস মূলত শিশুর শারিরীক গঠনে ভিটামিনডি, ক্যালসিয়াম এর অভাবে হলেও জিনগত কারন, অপর্যাপ্ত রোদের আলো, অপুষ্টিকর খাবার, গর্ভবতী মায়ের অপুষ্টি এবং ভিটামিনডি এর ঘাটতির কারনেও হতে পারে। রিকেটস প্রতিরোধে মায়ের গর্ভকালীন সময় থেকেই সচেতনতা জরুরী। শিশুর মধ্যে রিকেটস এর লক্ষন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শিশুদের Perthe’s Diseses এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার!

শিশুদের Perthe’s Diseses এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার!

১২ বছর বয়েসি শিশু হঠাৎ করেই কি একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছে? অথবা হাঁটু ব্যথা বা কুঁচকিতে ব্যথার কথা বলছে? হতে পারে আপনার শিশু Perthe’s Diseses ভুগছে।

Perthe’s Diseses কী?
এটি শিশুদের হিপ জয়েন্ট (কোমরের জোড়া) এর একটি রোগ যাতে ফিমারের হেড (উরুর হাড়ের গোল বলের মত মাথা) টি রক্ত প্রবাহে ঘাটতির কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। 

কাদের হয়?
সাধারণত ১০ বছরের শিশুদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের মধ্যে এই রোগের হার বেশি।

রোগের কারণ কী এবং এতে কী হয়?
জন্মগত কিংবা আঘাতজনিত কারণে এটি হতে পারে। সঠিক কারণ এখনো অজানা। তবে কম ওজনে জন্ম নেয়া শিশু, খর্বাকায় শিশু, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার, ADHD (Attension Deficit Hyperkinetic Disorder) আক্রান্ত শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়।

এই রোগে উরুর হাড়ের গোল বলের মত মাথার রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ধীরে ধীরে হাড় নষ্ট হয় এবং কিছু নতুন হাড় তৈরি হয়। ফলে মাথার গোল বলটির আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। 

লক্ষণ সমূহঃ
) খুঁড়িয়ে হাঁটা
) কুঁচকিতে বা হাঁটুতে ব্যথা
) কোমরের জয়েন্টের নড়াচড়ায় সীমাবদ্ধতা
) উরুর মাংস পেশীর দুর্বলতা

রোগনির্ণয় করা হয় কিভাবে?
শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, এক্সরে এবং প্রয়োজনে এমআরআই এর মাধ্যমে।

চিকিৎসাঃ
চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ফিমারের মাথাটি যথাসম্ভব গোল রাখার জন্য চেষ্টা করা। চিকিৎসার ধরণ নির্ভর করে রোগীর বয়স, রোগের প্রকৃতি এবং রোগের বর্তমান অবস্থার উপর।
) ননসার্জিক্যালঃ ব্রেস বা স্প্লিন্ট, ফিজিওথেরাপি এবং ব্যথানাশক ঔষধ
) সার্জিক্যালঃ অস্টিওটমি  

করণীয়ঃ
আপনার নবজাতক / শিশুর মধ্যে উল্লেখিত কোন ধরণের অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হলে অতিদ্রুত একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

কিশোর বয়সের কুচকিতে ব্যথা এবং খুঁড়িয়ে হাটা- স্লিপড ক্যাপিটাল ফিমোরাল এপিফাইসিস!

কিশোর বয়সের কুচকিতে ব্যথা এবং খুঁড়িয়ে হাটা- স্লিপড ক্যাপিটাল ফিমোরাল এপিফাইসিস!

আপনার সদ্য টিনেজ কিশোর/কিশোরী কি হাটু/কুচকিতে ব্যথার কথা বলছে এবং খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে? হতে পারে সে স্লিপড ক্যাপিটাল ফিমোরাল এপিফাইসিস সমস্যায় ভুগছে।  

স্লিপড ক্যাপিটাল ফিমোরাল এপিফাইসিস কী
উরুর হাড়ের উপরের অংশে বলের মত দেখতে মাথাটি পেল্ভিসের সকেটে বসে হিপ জয়েন্ট তৈরি করে। জন্মের পর গোল বলের মাথাটি উরুর হাড়ের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে না। এর মাঝে থাকে গ্রোথ প্লেট (যেখানে নতুন হাড় তৈরি হয়) যাকে বলা হয় ফাইসিস। এর উপরের অংশকে বলা হয় এপিফাইসিস। এই এপিফাইসিস যদি কোন কারনে পেছন দিকে সরে যায় তাহলে তাকে স্লিপড ক্যাপিটাল ফিমোরাল এপিফাইসিস। 

কাদের হয়ে থাকে
সাধারণত ১০১৪ বছর বয়সের কিশোর/কিশোরীদের হয়ে থাকে।  

কী কী কারণে হয়ে থাকে
) বয়সন্ধীকালে যখন হঠাৎ দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি হয়ে থাকে তখন হতে পারে। 
) যাদের পরিবারে ইতোপূর্বে এই ধরণের সমস্যা হয়েছে তাদের ঝুকি বেশি থাকে। 
) উচ্চতা অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন। 
) হরমোনজনিতঃ হাইপোথাইরয়েডিজম বা গ্রোথ হরমোন ঘাটতি। 

লক্ষণ সমূহঃ 
) তীব্র কুচকিতে ব্যথা  
) খুঁড়িয়ে হাঁটা/হাঁটতে না পারা 
) হাটুতে বা উরুর সামনের দিকে ব্যথা (অনেক ক্ষেত্রে কুচকি ব্যথার দুই সপ্তাহ আগে থেকে হাটুতে ব্যথা হতে পারে
) জয়েন্ট নড়াচড়া করতে কষ্ট হওয়া/না পারা 
) এক পা ছোট হয়ে যাওয়া। 

রোগ নির্ণয়ঃ 
সাধারণত শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা, এক্সরে এবং প্রয়োজনে এমআরআই বা বোন স্ক্যান এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। 

চিকিৎসাঃ 
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সার্জারি করা হয়ে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে (রোগের তীব্রতা অনুযায়ী) পূর্ণ শারীরিক বিশ্রাম এবং ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। 

যদি আপনার বয়সন্ধীকালের কিশোর/কিশোরি হঠাৎ করেই কুচকি ব্যথা, হাটতে কষ্ট হওয়া/না পারা, এক পা ছোট হয়ে যাওয়া সমস্যার কথা বলে, তাহলে আজই একজন বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক সার্জনের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, কখনো এই সমস্যা শুধুমাত্র হাটু কিংবা উরু ব্যথা নিয়েও প্রকাশ পেতে পারে। 

করণীয়ঃ
আপনার নবজাতক / শিশুর মধ্যে উল্লেখিত কোন ধরণের অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হলে অতিদ্রুত একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

শিশুদের ডেভেলমেন্টাল হিপ ডিসপ্লাসিয়া (DDH) এর কারণ, লক্ষণ ও করনীয়

শিশুদের ডেভেলমেন্টাল হিপ ডিসপ্লাসিয়া (DDH) এর কারণ, লক্ষণ ও করনীয়

নবজাতকের একটি পা কি ছোট মনে হচ্ছে, অথবা শিশু একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছে? হতে পারে আপনার শিশু/নবজাতক হিপ ডিসপ্লাসিয়াতে আক্রান্ত। 

DDH / ডেভেলপমেন্টাল ডিসপ্লাসিয়া অফ হিপ কী?
নবজাতক বা শিশুর হিপ জয়েন্ট (কোমর) এর বেশ কিছু ধরণের জন্মগত সমস্যাকে একত্রে ডেভেলপমেন্টাল ডিসপ্লাসিয়া অফ হিপ বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে এসিটাবুলাম এর গভীরতা কমে যাওয়া থেকে হিপ ডিসলোকেশন পর্যন্ত হতে পারে। 

কারণ এবং ঝুঁকিসমূহঃ

  • গর্ভে শিশু উল্টে থাকা
  • প্রথম শিশুদের ক্ষেত্রে 
  • মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি
  • পারিবারিক/ জিনগত কারণে ঝুঁকি বাড়ে

লক্ষণসমূহঃ
নবজাতকের ক্ষেত্রেএক পা ছোট থাকা, উরুর চামড়ার ভাঁজে অসমতা, আক্রান্ত পায়ের নড়াচড়ায় সমস্যা ইত্যাদি

শিশুদের ক্ষেত্রেখুঁড়িয়ে হাঁটা, হাসের মত পা ফেলে হাঁটা, এক পায়ে বুড়ো আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি

রোগ নির্ণয়ঃ

  • নবজাতকের ক্ষেত্রেফিজিক্যাল এক্সামিনেশন এর মাধ্যমে 
  • মাসের কম শিশুদের ক্ষেত্রেহিপের আল্ট্রাসনোগ্রাম
  • এক্সরে হিপবড় শিশুদের ক্ষেত্রে

চিকিৎসাঃ
শিশুর বয়স, রোগের মাত্রা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসার ধরণ নির্ধারন করা হয়। 

করণীয়ঃ
আপনার নবজাতক / শিশুর মধ্যে উল্লেখিত কোন ধরণের অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হলে অতিদ্রুত একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

হাড় ভাঙা/ ফ্র্যাকচারে প্রাথমিক কী করবেন?

হাড় ভাঙা/ ফ্র্যাকচারে প্রাথমিক কী করবেন?

ফ্র্যাকচার বা হাড় ভাঙা বলতে হাড় এবং কার্টিলেজ বা তরুণাস্থির আঘাত বা ভেঙে যাওয়াকে বোঝায়।

হাড় ভাঙার কারণঃ
ট্রমা বা আঘাত যেমন, রোড ট্রাফিক এক্সিডেন্ট, পড়ে যাওয়া, ফিজিক্যাল এসল্ট বা মারামারি। বয়স্ক রোগীদের অথবা অস্টীওপোরসিস/ হাড় ক্ষয়ের রোগীদের ক্ষেত্রে ট্রিভিয়াল ট্রমা বা সামান্য আঘাতেও ফ্র্যাকচার হতে পারে।

হাড় ভাঙার ধরণঃ
– ওপেন ফ্র্যাকচার (চামড়া ভেদ করে বাইরে চলে আসা)
– ক্লোজড ফ্র্যাকচার (চামড়ায় ক্ষত না হওয়া)

ইমেজিংঃ
– এক্সরে
– সিটি স্ক্যান
– বোন স্ক্যান
– এম আর আই

একজন ফ্র্যাকচার/ট্রমার রোগীকে চিকিৎসা প্রদান শুরু করতে হয় এডভান্সড ট্রমা লাইফ সাপোর্ট বা ATLS প্রটোকলের মাধ্যমে।

প্রাথমিক করণীয়ঃ
ওপেন ফ্র্যাকচার সাধারণত  wound contamination থাকে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের সময়ই পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পানিতে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ধুয়ে ফেলতে হয়। ভেঙে যাওয়া অঙ্গটিকে অচল করার জন্য প্লাস্টার বা শক্ত কিছু দিয়ে বাঁধা, রক্তপাত বন্ধ করার জন্য উঁচু করে রাখা, চাপ দিয়ে ধরা বা টুর্নিকেট দেয়া। 

ক্লোজড ফ্র্যাকচার এর ক্ষেত্রে প্রাথমিভাবে আক্রান্ত অঙ্গটিকে অচল করার জন্য প্লাস্টার করা হয়। পরবর্তিতে ধরন অনুযায়ী প্লাস্টার অথবা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

মূলত হাড় ভেঙে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ, আক্রান্ত অঙ্গকে অচল করার জন্য প্লাস্টার করা, শক্ত সাপোর্ট দেয়া অথবা পায়ের ক্ষেত্রে দুই পা একসাথে করে বেধে দেয়া যেতে পারে।

যা করা যাবে নাঃ
কোন অবস্থাতেই অত্যন্ত শক্ত করে চটা বাধা কিংবা অনভিজ্ঞ হাতে টাইট প্লাস্টার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কবিরাজি করে চটা বাধা কিংবা অত্যন্ত শক্তভাবে প্লাস্টার করার ফলে আক্রান্ত অঙ্গের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত অথবা পা পচে যেতে পারে।

সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের জন্য নিবন্ধিত চিকিৎসক কিংবা অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অপচিকিৎসা থেকে দূরে থাকুন। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।